মন বসে না কোন কাজে; মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়



                                            

                                                                             

কোন কাজে মন বসে না?

কিভাবে মনকে কন্ট্রোল করে সময়কে কাজে লাগাবেন?

কোন কাজ করার ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পর, কাজ অসমাপ্ত রেখে উঠে আসছেন!

এমন হচ্ছে যে আপনি ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন। কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারছেন না!

বারবার চেষ্টা করছেন, যে এবার কাজ টা করেই উঠবেন। সেই মানসিকতা নিয়ে আপনি ১০০% উদ্যমে প্রতিবার কাজ শুরু করছেন।

আর পনের বা বিশ মিনিট পরে আপনার মন অন্যত্র চলে যাচ্ছে, আর আপনিও অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছেন। আর আপনার কাজটিও শেষ পর্যন্ত সুন্দর ভাবে শেষ হচ্ছে না!

এমন হলে বুঝবেন আপনার নিজের উপর, সময়ের উপর আপনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন।

আর লাগাতার কর্মে বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার জন্য আপনি নিজের উপর থেকে বিশ্বাস হারাচ্ছেন।

চলুন সমস্যা টি আসলে কি ভাবে সৃষ্টি হচ্ছে আর তার সমাধানের উপায় জেনে নেই।

আমরা যখন কোন কাজে ব্যাপৃত হই তখন সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া সত্ত্বেও আমরা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি। কারণ, আমাদের অবচেতন মনে হঠাৎ হঠাৎ করে অন্যকোন ভাবনা, স্মৃতি বা ঘটনা এসে যায়।

আপনি কিছু পড়ছেন, পড়তে পড়তে কোন একটা শব্দ আপনার সামনে আসতেই সেই শব্দের সাথে অতীতের কোন ঘটনার জলছবি, আপনার মনের কোনে ভেসে উঠলো!

ব্যাস্ পড়ার থেকে আপনি বিচ্যুত হয়ে সে স্মৃতি রোমন্থনে নেমে গেলেন!

আবার ধরুন, আপনি আপনি এবার জোর সংকল্প করে কাজ করতে শুরু করলেন।

কিছুক্ষণ একাগ্রচিত্তে করলেন তারপর শুরু হলো অস্থিরতা !

একটু যাই ফেইসবুকটা ওপেন করি বা

একটা গান শুনি, এভাবে আপনার মন কিন্তু আপনার মুখ্য কাজ হতে বিকেন্দ্রিকরণ হয়ে গেলো!

আর এভাবে আপনি কাজটি সম্পূর্ণ করতে যে সময় লাগলো তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দিয়েও হয়তো কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেন না।

 

এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যা আপনার কাজে বাধা সৃষ্টি করে!

আর এমন ভাবে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আপনার কর্মতৎপরতা বা কাজের প্রতি স্পৃহা কমিয়ে দেয়!

তাহলে কি ভাবে এর থেকে নিষ্কৃতি মিলবে?

প্রথমত, আপনার কাজকে ভালোবাসুন।

আপনি যদি পড়াশোনা করেন। তবে পড়াসোনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করুন।

কিভাবে পড়ালেখায় আগ্রহ আনবেন জানতে নিচের লিংকে যেতে পারেন।

আপনি যে কাজ করেন, তা যদি মন থেকে পছন্দ না করেন, সে কাজে আনন্দ না পান তাহলে সেই কাজে আপনার মনোসংযোগ ব্যাহত হবে।

এনার্জি পিরিয়ড

এনার্জি পিরিয়ড নির্ণয় করুন। ব্যক্তি বিশেষের এমন হয় যে, কারো সকালে কারো রাতে, কারো বা সন্ধ্যায় কাজ করতে ভালো লাগে।

আপনার যে সময় টি কাজ করতে ভালো লাগে বা যে সময়ে আপনার কাজে স্পীড থাকে সে সময়টাই আপনার জন্য এনার্জি পিরিয়ড। এনার্জি পিরিয়ড কে কাজে লাগান।

এসময় অন্য কোথাও যাওয়া বা আড্ডাবাজি থেকে বিরত থাকুন।

বড় বা সময় সাপেক্ষ কাজ কে ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন।

প্রতিটি ক্ষুদ্রঅংশ কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন।

প্রতিটি দিনের বা ঘণ্টার জন্য কাজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করুন।

কর্মবিরতি নিন। একটানা কাজ করবেন না।

বিরতি, অতঃপর কাজে ফিরে যান আর নতুন উৎসাহে কাজ শুরু করুন। প্রতিঘণ্টার লক্ষ্যমাত্রা যে কোন মূল্যে পূরণের চেষ্টা করুন। সফলতা অবশ্যই আসবে।

সময় ম্যানেজমেন্ট করুন।

সময় ম্যানেজমেন্টের অ্যান্ড্রয়েড উপযোগী কিছু অ্যাপস আছে। এগুলোর সাহায্যে কিভাবে সময় ম্যানেজেন্ট করবেন জানতে  লিংকে যেয়ে আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

এবার আসুন মনসংযোগ বৃদ্ধির জন্য কি কি করা যেতে পারে জেনে নেই,

 

১. প্রতিদিন সকালে উঠুন

প্রত্যহ সকালে উঠাই আমাদের জন্য এখন কষ্টকর!

আধুনিক জীবনধারায় সারাদিনের কাজ কর্মের পর টিভি ইন্টারনেট পরিবার ম্যানেজ করে ঘুমাতে ঘুমাতেই আমাদের রাত ১২ টা ১ টা বেজে যায়!

কিন্তু রাতে একটু জলদি ঘুমাতে গেলেই তো আমরা সকাল সকাল উঠতে পারি।

ধরা যাক, আপনি রাত ১ টায় ঘুমান আন ঘুম থেকে ওঠেন সকাল ৮ টায়।

এটা না করে রাত ১১ টায় ঘুমিয়ে সকাল ৬ টায় উঠলেই তো এই দু’ঘণ্টা ম্যানেজ হয়ে যায়! সকালে উঠা স্বাস্থ্যসম্মত।

অপরপক্ষে, রাত্রি জাগা রক্তচাপ বৃদ্ধি, মৃত্যু ঝুঁকির মত সমস্যার সৃষ্টি করে।

 

২. প্রার্থনা করুন কিছুক্ষণ

প্রার্থনায় মন টা প্রফুল্ল হয়। মনের কষ্ট, আশা, হতাশা, পাপ-পুণ্য, ব্যার্থতা, দুঃখ, ক্ষোভ যা কারো সাথে শেয়ার করতে পারেন না তা স্রষ্টার তরে সমার্পন করুন।

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তাঁকে ধন্যবাদ দিন। কারণ, গতরাতের ঘুম আপনার আজ সকালে নাও ভাঙতে পারতো!

প্রতিটি সকাল মানে নতুন করে জন্ম! তাই স্রষ্টাকে স্মরণ করে দিন শুরু করুন। হৃদয় প্রশান্ত হবে। কাজে স্পৃহা জন্মাবে।

৩. প্রতিদিন মেডিটেশন করুন

আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা শ্বাস-নিঃশ্বাস পূর্ণ দৈর্ঘে নিতে ভুলে যাই! গভীর এবং পূর্ণ শ্বসন প্রক্রিয়া স্বাস্থ্য রক্ষায় অতীব গুরুত্ব বহন করে।

তাই প্রতিদিন মেডিটেশন করুন। আর গভীর ভাবে শ্বাস -নিঃশ্বাস পরিচালনা করুন। শরীরের কোষ গুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে এবং সতেজ হয়ে উঠবে।

দীর্ঘ ও গভীর শ্বাস-নিঃশ্বাস আপনার শরীরের ডায়াফ্রামকে প্রসারিত ও সংকুচিত করবে। শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো আন্দোলিত হবে।

আর সাথে সাথে আপনার প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পাবে।

৪. আত্মবিশ্লেষণ করুন

প্রতিদিন ১৫ মিনিট আত্মবিশ্লেষণ করুন। আপনার ত্রুটি বিচ্যুতি খুটিয়ে খুটিয়ে বের করুন। আর সে গুলো সমাধানের ছক করে ফেলুন। পিছনে ফেলে আসা দিনের থেকে আপনি কতটা ইমপ্রুভ হয়েছেন যাচাই করুন। এবং তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিন। এভাবে নিজের মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে নিজেকে অনন্য সাধারণ করে তুলুন।

৫. কাজের সময় প্রযুক্তির ব্যবহার


 ইন্টারনেটের এ যুগে আপনার মন বিক্ষিপ্ত, চঞ্চল হওয়ার হাজার টা কারণ থাকতে পারে। আপনার কাজে অমনোযোগী হবার অজস্র অজুহাত থাকতে পারে। হয়তো আপনি চাচ্ছেন কিন্তু মন টা কাজে বসছে না। প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারেন। কাজের সময় হালকা আমেজের মিউজিক চালাতে পারেন। ইন্টারনেট, ইউটিউবে রিলাক্সিং মিউজিক পাওয়া যায় বা প্লে স্টোরে ব্রেইন রিফ্রেশিং অ্যাপস পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করে মনোযোগ এবং কাজে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেন। কাজে মন না বসলে অ্যান্ড্রয়েড ইউজার রা পোমোডোরো অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন। কিভাবে অ্যাপস ব্যবহার করে কাজে বা পড়ালেখায় মনোসংযোগ করা যায় জানতে ক্লিক করুন এখানে। 

৬. কাজের ছোট ছোট রুটিন


 রুটিন মেনে চলা ব্যক্তি হাতে গোনা যায়। আপনি যদি কোন বাঁধা রুটিন অনুসরণ করতে না পারেন, তবে প্রতিদিনের কর্মপরিকল্পনা আগের রাতে করে রাখুন। এভাবেই প্রতিদিনের জন্য ছোট ছোট কাজের রুটিন আপনার অনুসরণ করতে সহজ হবে। আর বড় কোন কাজকে আপনি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ছোট ছোট রুটিনের মত করে করতে পারেন। এভাবে বড় কাজ টি একসময় করা হয়ে যাবে।

 ৭. অভ্যাস গড়ে তোলা 


অভ্যাস একদিনে গড়ে ওঠে না! আর কোন কাজের অভ্যাস করা টা যথেষ্ট কষ্টকর! তাই কোন ভাল একটি অভ্যাস রপ্ত করতে হলে দাঁতে দাঁত চেপে টানা ২১ দিন কাজটি করার চেষ্টা করুন। দেখবেন ২১ দিনের আগেই কাজটি করার অভ্যাস আপনার বেশ আয়ত্বে এসেছে। এই অভ্যাস নিয়মিত ৩ সপ্তাহে আপনার মাইন্ড সেট হয়ে গেছে! 

৮. পর্যাপ্ত আলোয় কাজ 


 অন্ধকার বা অালোকস্বল্প স্থানে কাজ করবেন না! আলোক স্বপ্লতা আপনার মস্তিষ্ক কে কাজে অমনোযোগী করে তোলে। নিদ্রা, আলস্য আনয়ন করে। আবার অতিরিক্ত আলোয় কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার চোখের সমস্যার সাথে নিদ্রা হীনতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই আপনার কর্মক্ষেত্রটি হোক পর্যাপ্ত আলোয়।

 ৯. কাজের মাঝে মাঝে বিরতি 


কাজ শুরুর পর পূর্ণ উদ্যম থাকে ২৫ মিনিট। আর ৪০ মিনিট পরে তো কর্মে বিরক্তি আসতে থাকে। আর তখন যদি বিরতি না নেন তখন কাজটি আর ভালো ভাবে সম্পন্ন হওয়ার আশা থাকেনা। টানা কাজ করার মাঝে ১ ঘণ্টা তাই ৫/১০ মিনিটের বিরতি নিতে পারেন। 
 বিরতির সময় হালকা ব্যায়াম করতে পারেন. এতে রক্ত সঞ্চালন হবে আপনার সমস্ত শরীরে। আর ব্যাক পেইনের মতো সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন ।
 বিরতিতে কাজের প্রতি আবার আপনার মনোযোগ ফিরে আসবে পূর্ণমাত্রায়।


 ১০. বিরতির সময় পানি, চা বা কফি পান 


 টানা কাজের মাঝে স্বল্প সময়ের বিরতি আপনার প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করে। আর এ সময়ে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি পান করতে পারেন।কাজের মাঝে পানি পান আপনাকে হারের ক্ষয় হতে বাঁচাবে। 
 হাত-চোখ-মুখ, ঘাড় পানি দ্বারা ধৌত করতে পারেন। এক কাপ চা বা কফি আপনার কর্মোদ্যোম ফিরিয়ে আপনাকে করে তুলবে আগের মতো উদ্দিপ্ত, কর্মতৎপর। 


১১. পর্যাপ্ত- পরিমিত ঘুম


 সারাদিন পরিশ্রমে আমাদের শরীর হয়ে পড়ে ক্লান্ত, নিস্তেজ। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আপনাকে করে তোলে তরতাজা, প্রাণবন্ত! অন্যদিকে, ঘুমের ঘাটতি থাকলে কাজে আপনার মনোসংযোগ ব্যাহত হবে। কর্মস্পৃীহা কমে যাবে। মস্তিষ্কের কর্মতৎপরতা গ্রাস পাবে। রক্তচাপের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে। স্বল্প ঘুম বা পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হওয়ায় আপনি মৃত্যুঝুঁকিতে থাকবেন সর্বদা! তাই ঘুমের প্রয়োজন। একজন মানুষ জীবনের এক-তৃতীয়াংশ ঘুমিয়ে কাটায়! ২৪ ঘন্টার ৭/৮ ঘন্টা ঘুম তাই পর্যাপ্ত! কাজের মাঝে কখনো ক্লান্ত লাগলে, অবসাদগ্রস্ত হলে ১০/১৫ মিনিট ঘুমিয়ে নিতে পারেন। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখটা বন্ধ করে এক টুকরো ঘুম পরবর্তীতে আপনার কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেবে। তবে অবশ্যই স্বল্প পরিসরে ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোনে এলার্ম দিতে ভুলবেন না! 

এভাবে আপনি নিয়মিত চেষ্টা করলে অবশ্যই আপনার মনোযোগ পূর্ণমাত্রায় ফিরে পাবেন এবং কাজে মনোযোগী হয়ে সফল হতে পারবেন। আমরা কেবল ভাবি, এটা করবো ওটা করবো, এই পর্যন্তই! পরে এই তৎপরতা থাকেনা! তাই কর্মতৎপর হতে মনটা স্থির করে অভ্যাস গড়ে তুলুন। সফলতা আসবে, অবশ্যই আসবে তবে ধীর পায়ে, আপনাকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে। তবেই আপনি বিজয়ী হবেন জীবনযুদ্ধে!


I BUILT MY SITE FOR FREE USING